পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়
হাত পা শরীর জ্বালাপোড়া করার কারনগরমের আভাস পড়তে না পড়তেই শরীরে দেখা দিচ্ছে না রোগের উপসর্গ এগুলোর মধ্যেই হলো পুরুষের প্রস্তাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া করা। পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় এই বিষয়ে অনেকেই সঠিক তথ্য জানেনা। আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা জানব পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়।
পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হলে কি ওষুধ খেতে হবে, পুরুষাঙ্গে জ্বালাপোড়া কেন হয় এবং ছেলেদের প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথা হলে কি করতে হবে ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
পোস্ট সুচিপত্রঃ পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়,করণীয়
.
পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়
জ্বালাপোড়া তো আমরা শুধু হাত পা এবং শরীরের বুঝি কিন্তু বর্তমান সময়ের একটি মারাত্মক ব্যাধি হলো প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া। এই রোগটি শুধু যে মহিলাদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা নয় এখন বর্তমানে এই রোগটি পুরুষের মধ্যেও সমান ভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। মেডিকেল সায়েন্স প্রমাণ করেছেন যে প্রতি ১০০ জনে ১০ জন পুরুষ প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়ার শিকার।
পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয় তার কয়েকটি কারন নিচে আলোচনা করা হলো,
ডাইবেটিস
পুরুষদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হওয়ার একটি প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিস। ডাইবেটিস টাইপ ওয়ান ও ডায়াবেটিস টাইপ 2 এই দুই ধরনের ডায়াবেটিসের প্রধান লক্ষণ হল অধিক পরিমাণ প্রস্রাব করা। অধিক পরিমাণ প্রস্রাব করার কারণে শরীর থেকে গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়। তাই পুরুষ মানুষের বার বার প্রস্রাব এবং প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হওয়ার প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিস। তার জন্য আপনাকে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
কম পানি পান করা
পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হওয়ার আরেকটি কারণ হলো কম পানি পান করা। শরীরে যখন পানির পরিমাণ কমে যায় তখন প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হয়। শরীরে যখনই পানি কম হবে তখন ইউরিন ট্র্যাক্ট ইনফেকটেড হবে যার ফলে পরবর্তীতে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হবে প্রস্রাবে রক্ত দেখা দিবে এবং জ্বর দেখা যেতে পারে।
প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড
পুরুষ মানুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হওয়ার কারণ হলো প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যা। প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড যদি কোন কারণে মোটা হয়ে যায় তখন ইউরিনারি সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফলে যার কারণে অধিক বার প্রস্রাবের চাপ আসে। এরকম লক্ষণ আপনার মধ্যে দেখা দিলে অতিসত্বর ডাক্তারে শরণাপন্ন হন।
অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য পান
যে সকল পুরুষের অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য যেমন মন বিয়ার খান তাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কারণ বিয়ার এবং মদে বিদ্যমান রাসায়নিক কেমিক্যাল ইউরিনারী সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যার ফলে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হয়।
অধিক পরিমাণ কফি খাওয়া
হ্যাঁ বন্ধুরা যে সকল পুরুষের দিনে ঘুম থেকে উঠে কফি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে এবং প্রতি দিনে অন্তত চার থেকে পাঁচ কাপ কফি খায় তাদের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
আমরা অনেকেই না বুঝে না জেনে ডাইউরেটিক্স টাইপের ওষুধ খেয়ে থাকি। এখন যেই সকল পুরুষ মানুষ অধিক পরিমাণ ডাইউরেটিক্স ওষুধ পান করে তাদের শরীরের লবণ এবং পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে লবণ পানির ঘাটতি দেখা দেয় যার কারনে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে
পুরুষ মানুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হওয়ার আরেকটি কারণ হলো জীবাণু। কোন কারনে যদি মূত্রথলি জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় প্রস্রাবের রাস্তায় যারা পোড়া হয়।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে
পুরুষ এর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি কোন কারণে কমে যায় তাহলে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমার অনেক কারণ রয়েছে যেমন ডায়াবেটিস এইচআইভি স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, কেমোথেরাপি ইত্যাদির কারণেও প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হয়।
পুরুষাঙ্গে জ্বালাপোড়া কেন হয়
পুরুষ মানুষের পুরুষাঙ্গ একটি সেনসিটিভ অঙ্গ। কোন কারনে যদি এই অঙ্গের ক্ষতি হয় তাহলে পুরো শরীরের কাজ করার সিস্টেম নষ্ট হয়ে যায় যার কারণে শরীরে বাসা বাঁধে অনেক রোগ। তাই আমাদেরকে অবশ্যই জেনে রাখতে হবে যে কি কি কারণে প্রসঙ্গে জ্বালাপোড়া হয়? তাহলে চলুন জেনে নিই কি কি কারণে প্রসঙ্গে জ্বালাপোড়া হয়,
- লিঙ্গ ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক দ্বারা সংক্রমিত হলে
- দীর্ঘক্ষণ সেক্স করলে
- শক্ত কাপড় দিয়ে লিঙ্গ পরিষ্কার করলে
- টাইট প্যান্ট পরিধান করলে
- কম পানি পান করলে
- দীর্ঘক্ষন শক্তি প্রয়োগ করে হস্তমৈথুন করলে
- কিডনিতে অথবা প্রস্রাবের নালিতে পাথর হলে
- ইউরিনারি ট্রাক্টের সংক্রমণ ঘটলে
- সহবাসের সময় বীর্য নষ্ট করে এরকম কনডম ব্যবহার করলে
- যৌন রোগ এ আক্রান্ত থাকার ফলেও পুরুষাঙ্গে জ্বালাপোড়া হয়।
- প্রস্রাবের সময় তাড়াহুড়ো করে প্রস্তাব করার ফলে পুরুষাঙ্গে জ্বালাপোড়া হয়।
আপনার মধ্যে যদি উপরে বর্ণিত এর লক্ষণ গুলো দেখা দেয় তাহলে আপনি অতি শীঘ্র ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার আপনাকে কিছু পরীক্ষা করে সঠিক ঔষধ দেবেন যার কারণে আপনি খুব দ্রুতই পুরুষাঙ্গের জ্বালাপোড়া রোগ থেকে রেহাই পাবেন ইনশাআল্লাহ।
পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হলে করণীয়
পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করায় শ্রেয়। অনেকে লজ্জার কারণে ডাক্তারের কাছে সমস্যার কথা বলতে ইতস্ত বোধ করেন। তাই তাদের জন্য রয়েছে সুখবর আপনি চাইলে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করেও প্রস্রাবের রাস্তার জ্বালাপোড়া দূর করতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তার জ্বালাপোড়া দূর করা যায়
লেবু পানি পান করে
পুরুষাঙ্গের জ্বালাপোড়া অথবা প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য লেবু খুব উপকারী। লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি ও এন টি অক্সিডেন্ট প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে। আপনি যদি চান একটু পানি কুসুম কুসুম গরম করে লেবুর রস মিশ্রিত করে খেতে পারেন প্রতিদিন সকালে লেবুর রস খেলে আপনার প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দূর হবে।
আখের রস খেয়ে
পুরুষ প্রস্রাবের যেকোনো রকমের ইনফেকশন সংক্রমণ জ্বালাপোড়া ইত্যাদি রোগ সারানোর জন্য আখের রস খুব কার্যকরী। আখের রসে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে।
শাকসবজি
অধিক পরিমাণ আমিষ খাওয়ার কারণে শরীর কোষ্ঠকাঠিন্য হয় কিন্তু আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখেন তাহলে আপনার প্রস্রাবের সংক্রমণ জ্বালাপোড়া দূর হবে। পাশাপাশি শাকসবজিতে উপস্থিত ফাইবার আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখবে।
দই
পুরুষ অঙ্গের জ্বালাপোড়া প্রস্রাবের রাস্তার জ্বালাপোড়া দূর করার জন্য দই খুব উপকারী। দয়ে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং পিএচ বৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুনঃ টক দই খাওয়ার উপকারিতা
গরম চা
প্রস্রাবের রাস্তার জ্বালাপোড়া দূর করার জন্য গরম চা পান করলে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়াও পেট ব্যথা থেকে আরাম পাওয়ার জন্য গরম পানির সে খুব কার্যকরী।
পানি পান করা
ইউরিনের যত রকমের ইনফেকশন রয়েছে সব গুলোর একটাই কারণ শরীরে পানি কম থাকা। তাই শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম স্ট্রং করার জন্য এবং প্রস্রাবের ও পুরুষাঙ্গের সকল রকমের সংক্রমণ দূর করার জন্য পানি খাওয়ার কোন বিকল্প নেই।
ডাবের পানি
ডাবের পানিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি দিয়ে প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া এবং পৌর সঙ্গে জ্বালাপোড়া কম করে। এছাড়াও ডাবের পানিতে উপস্থিত ভিটামিন এবং খরের উপাদান শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
যৌন মিলনে সতর্কতা
যৌন মিলনের লিপ্ত হওয়ার আগে আপনাকে আপনার সঙ্গীর প্রস্রাবে ইনফেকশন আছে কি জেনে নিতে হবে। যদি আপনার সঙ্গীর প্রস্রাবে ইনফেকশন থাকে তাহলে আপনারও ইনফেক্টেড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমার প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনাদের যদি প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হয় অথবা পুরুষাঙ্গে জ্বালাপোড়া থাকে তাহলে আপনি উপায় গুলো অবলম্বন করবেন। আশা করছি আপনার সমস্যা দূর হবে।
ছেলেদের প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথা হলে করণীয়
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খাওয়ার কারণে শরীরে জ্বালাপোড়া দেখা দেয় এমনকি প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথা ও দেখা দেয়।
- বদ হজমের কারণে প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভূত হয়।
- লিভারের কোন রকমের জটিলতা থাকলেও প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথা হয়।
- অধিক পরিমাণ মদ্যপাড়ার কারণে শরীরে অ্যালকোহলের পরিমাণ বেড়ে যায় যার কারণে সৃষ্টি হয়। এর ফলস্বরূপ প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথা হয়।
- দীর্ঘ সময় যাবত শরীর চর্চা করার কারণে শরীরের বিভিন্ন সেলের উপর চাপ পড়ে যার কারণে প্রস্রাবের সময় ইউরেটার নালী সংকুচিত হয়। ইউরেটার নালী সংকুচিত হওয়ার কারণে প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথা অনুভূত হয়।
- দীর্ঘ সময় যাবত প্রস্রাব আটকে রাখার কারণে প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথা অনুভূত হয়।
প্রস্রাবের রাস্তার ব্যথা দূর করার জন্য কখনো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন না করার কারণ যতটা কম ওষুধ সেবন করে শরীর সুস্থ রাখা যায় ততটাই ভালো। খুব সামান্য অসুবিধা হলে এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। খাদ্য তালিকায় শাকসবজি যুক্ত করতে হবে এবং অধিক পরিমাণ আমিষ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
শেষ কথা - পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়
পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কেন হয়, পুরুষাঙ্গে জ্বালাপোড়া কেন হয়, পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া হলে কি করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে আজকেরে আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের শারীরিক সুস্থতায় কাজে আসবে।
আপনি যদি শারীরিক সুস্থতা গুরুত্বপূর্ণ টিপস সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে তাহলে নিয়মিত আমার স্বাগতম বিডি ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এছাড়াও আপনার যে সকল আত্মীয়-স্বজন অথবা বন্ধু-বান্ধব এই রোগে আক্রান্ত তাদের সাথে শেয়ার করে দেবেন যেন তারা এই রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারে।
স্বাগতম বিডিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url