গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা টমেটো খেলে কি উপকার হয় এ সকল বিষয় নিয়ে হয়তো আপনি জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আজকে আমার এই পোস্টটি আপনার জন্য। তাহলে চলুন আর সময় নষ্ট না করে গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
গর্ভাবস্থায় টমেটো বাচ্চা এবং গর্ভবতী মা দুজনের জন্যই খুব পুষ্টিকর তাই সঠিক নিয়মে টমেটো খাওয়া দরকার। চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থার কোন সময় থেকে টমেটো খাওয়া শুরু করা উচিত।
ভুমিকা
গর্ভাবস্থায় এমন খাবার খেতে হবে যেগুলো মা এবং শিশুর দুজনের শরীরের পুষ্টি যোগানোর জন্য সক্ষম। গর্ভাবস্থায় সাধারণত মাকে সে সকল খাবার খাওয়াতে হবে যে সকল খাবারে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ক্যালসিয়াম প্রোটিন খনিজ পদার্থ এ সকল বিদ্যমান থাকে। গর্ভবতী মা যে সকল খাবার গ্রহণ করে সে সকল খাবার থেকে গর্ভে অবস্থিত শিশুর মানসিক দৈহিক শারীরিক বিকাশে পুষ্টির সরবরাহ করে।
আজকের আমার এই পোস্টটিতে আমি আলোচনা করব গর্ভবতী মায়ের জন্য টমেটো খাওয়া উপকারী নাকি অপকারী। আমরা সকলেই জানি টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম উপস্থিত যেগুলো গর্ভবতী মায়ের শরীরকে শক্তি সরবরাহ করে থাকে। এই পোস্টটিতে আমি আপনাদেরকে গর্ভবতী অবস্থায় টমেটো সম্পর্কিত সকল তথ্য জানানোর চেষ্টা করব তাই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
গর্ভাবস্থায় রান্না করা টমেটো খাওয়া যাবে কি?
টমেটো হচ্ছে খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি সবজি। এটি আমাদের শরীরকে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ভিটামিন কে সরবরাহ করে। এছাড়াও টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম আয়রন উপস্থিত যেগুলো গর্ভাবস্থায় শরীরে ঘাটতি পূরণ করে। টমেটোতে উপস্থিত ভিটামিন এ শিশুরএবং গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করে।
আমাদের মধ্যেই অনেকেই মনে করেন যে গর্ভাবস্থায় রান্না করা টমেটো খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এই পথ ধারণাটি ভুল গর্ভাবস্থায় রান্না করা টমেটো খেলে কোন রকমের ক্ষতি হয় না। রান্না করা টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি প্রোটিন থাকে যেগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ বিভিন্ন উপকার করে। তাই গর্ব অবস্থায় রান্না করা টমেটো খাওয়া খুব উপকারী।
গর্ভবতী হওয়ার প্রথম দিকে টমেটো খাওয়া যাবে কি
টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি ফাইবার পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম আয়রন জিংক ফসফরাস ক্রোমিয়াম ভিটামিন সি ভিটামিন ডি বিদ্যমান রয়েছে। তাই আমরা যদি গর্ভবতী মাকে টমেটো খাওয়ায় তাহলে মায়ের শরীরের সাথে সাথে বাচ্চা শরীর ও সুস্থ এবং রোগ মুক্ত থাকবে।
এখন আমাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন যে গর্ভকালীন সময়ে কোন কোন সময় থেকে গর্ভবতী মাটির টমেটো খাওয়ানো উচিত? এই প্রশ্নটির উত্তর হল গর্ভবতী মাকে গর্ভ ধারণের ১৫ থেকে ২৫ দিনের পর থেকে টমেটো খাওয়ানো যাবে। গর্ভ ধারণের প্রথম থেকেই শরীরে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান প্রবেশ করলে বাচ্চার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
গর্ভাবস্থায় টমেটো জুস খাওয়া যাবে কি
টমেটো জুসের চুল পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি আমাদের দাঁতের যত্নে খুব উপকারী পাশাপাশি কোন গর্ভবতী মায়ের যদি এলার্জিজনিত সমস্যা থাকে তাহলে টমেটো জুস কমে যায়। যদি ক্যালরির দিকে বিবেচনা করা যায় তাহলে দেখতে পাই যে ১০০ গ্রাম টমেটোতে ১৮ কিলো ক্যালরি রয়েছে।
গর্ভবতী অবস্থায় টমেটো খেলে কি হয়
গর্ভবতী অবস্থায় টমেটো খেলে গর্ভবতী মায়ের শরীরের যে সকল উপকার হয় সেগুলো হলো,
- টমেটোতে প্রায় ৯৫ ভাগ পানি থাকে তাই টমেটো খাবার ফলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা প্রস্রাবের সংক্রমণ এর প্রকো টমেটোতে উপস্থিত ফাইবার গর্ভবতী মায়েরপ কমে যায়।
- গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের শরীর প্রচুর পরিমাণ আয়রন প্রয়োজন টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে।
- বাচ্চার জন্মগত নিউরাল টিউব এর অস্বাভাবিকতা প্রতিরোধ করে।
- গর্ভধারী মায়েরা অনেক চিন্তা করে যার ফলে তাদের প্রেসার বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। উপস্থিত পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে।
- টমেটোতে উপস্থিত ফলিক এসিড রক্তের মেগালো ব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া কমায়।
- পাকা টমেটোতে উপস্থিত লাল পিগমেন্ট রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে যার ফলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।
- টমেটোতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম গর্ভবতী মায়ের হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে।
- টমেটোতে উপস্থিত ফাইবার গর্ভবতী মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
গর্ভকালীন সময়ে কোন মা যদি টমেটো খায় তবে তার শরীরের উপরোক্ত সমস্যাগুলো হবে না। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীর সুস্থ থাকা খুব প্রয়োজন মা সুস্থ থাকলে তবে সন্তান সুস্থ এবং স্বাভাবিক থাকবে।
গর্ভবতী মা টমেটো খেলে কি হয়?
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মাঠ টমেটো খেলে টমেটো উপস্থিত ভিটামিন সি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মা অল্পতেই ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করে। টমেটোতে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে এবং শরীরকে এনার্জিটিক করে তোলে।
গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভধারিনী মাকে এমন খাবার খাওয়ানো উচিত যে সকল খাবার তার শরীরকে বিভিন্ন রকমের প্রোটিন ভিটামিন খনিজ লবণ এবং প্রয়োজনীয় সকল রকমের পুষ্টি সরবরাহ করে। এই সকল পুষ্টি উপাদান টমেটোর মধ্যে উপস্থিত। গর্ভধারিনী মা যে সকল খাবার খায় সেই সকল খাবার থেকে বাচ্চা শোষণ পদ্ধতিতে তার প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি সংগ্রহ করে নেয়।
গর্ভধারিনী মাকে খাবার খাওয়ানোর সময় টাটকা এবং সবুজ শাকসবজি খাওয়াতে হবে যেন বাচ্চা তার প্রয়োজন মতো পুষ্টি পেতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় গর্ভধারণী মা যদি টমেটো খায় তাহলে তার কি কি উপকার হয়।
হাড়কে সুস্থ রাখতেঃ টমেটোতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম আয়রন ফসফরাস গর্ভবতী মায়ের হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে।
ওজন কমাতেঃ গর্ভকালীন সময়ে গর্ভধারিনী মায়ের ওজন বেড়ে যেতে পারে যার ফলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য টমেটোতে উপস্থিত অ্যামিনো চর্বি ঝরিয়ে দেয় ।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ টমেটোতে উপস্থিত লাইকোপিন গর্ভবতী মায়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
রক্তশূন্যতা দূর করতেঃ টমেটোতে উপস্থিত লাল পিগমেন্ট রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে যার ফলে গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর হয়।
পানি শূন্যতা দূর করতেঃ টমেটোতে প্রায় 95 ভাগ পানি উপস্থিত। তাই শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে টমেটো খুব উপকারী।
প্রস্রাবের সংক্রমণ রোধেঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ পানি উপস্থিত থাকায় প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া এবং প্রস্রাবের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ টমেটোতে উপস্থিত পটাশিয়াম গর্ভধারিনী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ অনেক গর্ভধারিনী মা ডায়াবেটিসের আক্রান্ত থাকেন তারা যদি গর্ভকালীন সময় টমেটো খান তবে তাদের রক্তের সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার ফলে ডায়াবেটিস ও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
শর্করার পরিমাণ রক্ষার্থেঃ টমেটোতে কার্বোহাইড্রেট ৭৫% উপস্থিত। তাই গর্ভকালীন সময়ে টমেটো খাওয়ার ফলে শরীরের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কার সিনোভাব দূর করতেঃ টমেটোতে উপস্থিত কিউমারিক ও ক্লোরোজেনিক শরীরের কারসিনোভাব দূর করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ টমেটো যেহেতু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার তাই টমেটো খাবার ফলে পাকস্থলীতে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ টমেটোতে যেহেতু প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন উপস্থিত যার ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ক্লান্তি ভাব দূর করতেঃ গর্ভকালীন সময়ে খুব অল্পতে দুর্বলতা অনুভব করেন তাই কেউ যদি নিয়মিত টমেটো খায় তবে তার শরীরের ক্লান্তি দূর হবে।
গর্ভাবস্থায় টমেটো কি ক্ষতিকর?
গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু অপকারিতা রয়েছে। অধিক মাত্রায় টমেটো খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় যে সকল সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো হল,
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত টমেটো খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে লাইসোপিন বেড়ে যায় ফলে হজম শক্তিতে ব্যাঘাত ঘটে।
- টমেটোর বীচি শরীরে বেশি পরিমাণ গেলে কিডনিতে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- যদি বেশি পরিমাণ টমেটো খাওয়া হয় তাহলে রক্তে ইউরিক এসিড বেড়ে যেতে পারে।
- যে সকল ব্যক্তির গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা টমেটো খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন নয়তো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়তে পারে।
- বেশি টমেটো খাওয়ার ফলে রক্তের লাইপছিন বেড়ে যায় যার ফলে ত্বকের রং পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
- বেশি টমেটো খাবার ফলে রক্তের টাইরোমিন হরমোন বেড়ে যায় যে কারণে গর্ভবতী মায়ের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
- যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় রয়েছে তারা যদি টমেটো খাওয়ার পরে গায়ের চুলকানি বা র্যাশ বের হয় তবে অতিসত্বর ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।
- টমেটোতে উপস্থিত স্যালমনেলা ডায়রিয়া হওয়ার লক্ষণ হওয়ার জন্য দায়ী তাই টমেটো অধিক পরিমাণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
স্বাগতম বিডিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url