বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়-বিলিরুবিন বেড়ে গেলে কি হয়
রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে কি কি সমস্যা হয় এ সকল বিষয় নিয়ে হয়তো আপনি জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনার জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি খুব উপকারি হবে। তাহলে চলুন আর সময় নষ্ট না করে বিলিরুবিন সংক্রান্ত সকল তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
রক্তে বিলিরুবিনের কাজ বিলিরুবিন হঠাৎ কমে গেলে বা বেড়ে গেলে কি কি সমস্যা হয় সে সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি তাই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইলই।
ভূমিকা
রক্তরসে উপস্থিত লোহিত রক্তকণিকা পর্যায়ক্রমে ভেঙ্গে বিলিরুবিন ও বিলিভারডিন তৈরি হয়। বিলিরুবিন লিভারে যাওয়ার পরে পিত্ত নালীর মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে পৌঁছে সেখানে প্রক্রিয়াকরণ করে। এর পরবর্তীতে বিলিরুবিন পায়খানার সাথে দেহ থেকে নির্গত হয়।
বিলিরুবিন এর কাজ কি
লিভারের কার্যক্রম সঠিকভাবে বজায় রাখতে বিলিরুবিনের ভূমিকা সবথেকে বেশি। বিলিরুবিন লোহিত রক্তকণিকার ভাঙ্গনের ফলে সৃষ্টি হয় এবং পরে যকৃতে উৎপন্ন পিত্তরসের সাথে পরিপাকতন্ত্র প্রবেশ করে পাকস্থতপন্ন সঞ্চয় হয়। বিলিরুবিন আমাদের শরীরে অনেকগুলো প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকে।কাজ গুলো হল,
- রক্তে অম্লত্ত ও ক্ষারত্তের ভারসাম্য বজায় রাখা।
- রক্তের আয়রনের ট্র্যান্সপোর্ট সাহায্য করা।
- প্রস্রাবের রং স্বাভাবিক রাখা।
- শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন চোখ ত্বক চামড়ার হলদেটে ভাব দূর করা
- রক্তের মেটাবলিসম বৃদ্ধি করা।
- রক্তে উপস্থিত বিভিন্ন প্লাজমা মেমব্রেন কে সতেজোতা ও নমনীয়তা প্রদান করা।
বিলিরুবিন বেড়ে গেলে কি হয়
বিলিরুবিন আমাদের রক্ত ভাঙ্গনের ফলে দেহেই তৈরি হয়। বিলিরুবিনের যেমন উপকারিতা দিক রয়েছে ঠিক তেমনি রক্তে বিলিরুবেন বেড়ে গেলে অনেক রকমের সমস্যা দেখা দেয় সমস্যাগুলো হল,
- চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়।
- শরীরের মিউকাস ঝিল্লি গুলো সাদা হয়ে যায়।
- রক্ত বিলিরুবিন বেড়ে গেলে জন্ডিস হয়।
- রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়ার ফলে ক্ষুধা মন্দা,খাওয়ার অরুচি, বমি বমি ভাব, খুব অল্পতেই শরীরে ক্লান্তি ভাব এগুলো উপসর্গ দেখা দেয়।
- রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যাবার ফলে লিভারের অনেক রকমের সমস্যা যেমন লিভার সিরোসিস, লিভারে সংক্রম্ন লিভার প্রদাহ এ সকল উপসর্গ দেখা দেয়।
- রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যাবার ফলে এনজাইম তার কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন রেচনতন্ত্রের ব্যাঘাত ঘটে।
বিলিরুবিন কমে গেলে কি হয়
বিলিরুবিন হলো একটি লৌহঘটিত জৈব পদার্থ। রক্তে উপস্থিত লাল হিমোগ্লোবিন যা সময়সাপেক্ষে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিলিরুবিনে পরিণত হয়। অধিক পরিমাণ হিমোগ্লোবিন ভেঙে যাবার ফলে রক্তের বিলিরুবিন পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যার ফলে জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিলিরুবিন পিত্ত নালির মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রের প্রবেশ করে এবং পিত্তরসের সাথে পরিপাকতন্ত্র থেকে নির্গত হয়।
যদি কোন কারণে রক্তের উপস্থিত লোহিত রক্তকণিকা প্রয়োজনের কম পরিমাণে ভাঙতে থাকে তাহলে বিলিরুবিনের পরিমাণ রক্তে কমে যায়। রক্তে বিলিরু বিনের পরিমাণ কমে গেলে সেরকম কোন জটিলতা বা সমস্যা হয় না। বরং রক্তে যদি বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায় তবে লিভার সিরোসিস বা জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিলিরুবিন কেন বাড়ে
রক্তে বিলিরুবেন বাড়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো,
- রক্তে উপস্থিত লাল হিমোগ্লোবিন অধিক পরিমাণ ভাঙ্গনের ফলে বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- লিভারে প্রদাহের কারণে বিলিরুবিন পরিপাকতন্ত্রের প্রবেশ করতে পারে না যার ফলে রক্তে বিলিরু বিন পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
- পিত্ত নালীর টিউমার বা ব্যাথার কারণে যখন বিলিরুবিন খাদ্যনালীতে প্রবেশ করতে পারেনা তখন রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- লিভার সিরোসিস এর কারণে যখন লিভার সঠিকভাবে কর্ম ক্ষমতা থাকতে পারে না তখন বিলি রুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ফলে যখন শরীরের প্রয়োজনীয় কোষগুলো ধ্বংস হতে থাকে তখন রক্তে বিলিরুবিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
- পিত্ত নালী ব্লক হয়ে হয়ে গেলে বিলিরুবিন পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করতে পারেনা তখন রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর উপায়
রক্তে হঠাৎ করে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে শরীরে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলতে পারেনা তখন শরীর অস্বাভাবিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। তাই শরীরকে আবার আগের মত স্বাভাবিক করতে রক্তের বিলিরুবিন কমানো প্রয়োজন। রক্তে বিলিরুবিন কমানোর কয়েকটি উপায় নিচে বর্ণনা করা হলো,
- রক্তের বিলিরুবেন কমাতে প্রতিদিন দুই গ্লাস আখের গুড়ের শরবত খেতে হবে।
- রক্তের বেলরোবিন কমাতে টাটকা ফল এর রস যেমন তোর মন আপেল এগুলোর জুস তৈরি করে খেতে হবে।
- রক্তের বিলিরুবিন বৃদ্ধি পেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে।
- রক্তে বিলিরুবিন এর পরিমাণ কমাতে তরল জাতীয় খাবার যেমন সোপ সস এগুলো খেতে হবে।
- বিলিরুবিন এর পরিমাণ কমাতে প্রতিদিন এক গ্লাস ঘোল খাওয়া যেতে পারে তবে বিলিরুবিন এর পরিমাণ কমতে থাকে।
- বিলিরুবিনের পরিমাণ কমাতে টাটকা সবজির স্যুপ তৈরি করে খেতে হবে।
- বিলিরুবিন লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাই লিভার কে সুস্থ রাখতে অধিক পরিমাণ মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
- বিলিরুবিন এর পরিমাণ কমাতে লেবুর রস খেতে হবে।
- বিভিন্ন শাক-সবজি পুঁইশাক লাল শাক এরকম শাকসবজি খেতে হবে যেন কোষ্ঠকাঠিন্য না হয় আর শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না
বিলিরুবিন নরমাল রেঞ্জ
রক্তে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণ বিলিরুবিন বেড়ে গেলেই জন্ডিস হতে পারে। তাই আমাদেরকে জানতে হবে যে বিলিরুবিন এর নরমাল রেঞ্জ কত।
রক্তে বিলিরুবিনের নরমাল রেঞ্জ হল 1.2 mg/dL এর নিচে (25 umol/L) ।
বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
হিমোগ্লোবিনের ভাঙ্গনের ফলে উৎপন্ন বিলিরুবিন ও বিলিবার্ডেন যখন শরীরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণে উৎপন্ন হয় তখন রক্তের য়ের বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। রক্তে অধিক পরিমাণ বিলিরুবিন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে জন্ডিস হয়। রক্তে বিলিরুবিন এর মাত্রা 1.2 mg/dL এর বেশি বা 3mg/dL (50 umol/L) হলে জন্ডিস হয় ।
নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
নবজাতক বাচ্চার শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিনের ভাঙ্গন বেশি হতে থাকে তবে বাচ্চা জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই বাচ্চার শরীরের দিকে সবসময় নজর রাখতে হবে যে তাদের শরীররে কি অনেক জ্বর বা ক্ষুধা মন্দা বা অরুচি হচ্ছে কিনা যদি এগুলোর কোন একটি উপসর্গ দেখা দেয় তবে অতিসত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।
আরও পড়ুনঃ রক্তের এলার্জি দূর করার জন্য কি কি করণীয়
নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিনের নরমাল রেঞ্জ হল 1.2mg/dL (30 umol/L)। ডাক্তাররা জানিয়েছেন যে নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ খুব বেশি পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না তবুও যদি কোন কারণে বিলিরুবিনের পরিমাণ 1.2 mg/dL এর ওপরে হয় তবে বাচ্চাটি জন্ডিসের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্তব্য
আজকের এই পোস্টটিতে আমি রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে কি কি সমস্যা হয় রক্তের বিলিরুবিনের নরমাল মাত্রা কত এবং বিলিরুবিন কি কি কাজ করে এই সংক্রান্ত সকল সঠিক তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি। আপনারা যদি আমার এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করে জানাবেন। পরবর্তী পোস্ট পাবলিশ হওয়া পর্যন্ত আমার সাথেই থাকবেন ধন্যবাদ।
স্বাগতম বিডিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url